সিঙ্গাপুরে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সিঙ্গাপুরের ‘প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড’ পেতে যাচ্ছেন বাংলাদেশী বংশোভূত সিঙ্গাপুরের নাগরিক কবির হোসেন। সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি হালিমাহ ইয়াকুবের হাত থেকে
এওয়ার্ডটি গ্রহণ করবেন তিনি। প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ডটি হচ্ছে সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানিত পুরস্কার। খবর, বিডিপ্রেস এজেন্সি’র।গত শুক্রবার এ খবরে প্রকাশ পেলে দেশ বিদেশে বাংলাদেশী অ’ভিবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা উচ্ছাস দেখা মেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে। প্রতিক্রিয়ায় কবির হোসেন বলেন, এটা আমা’র জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। সিঙ্গাপুর সরকার এতবড় সম্মান আমাকে
দিবে এটা কখনো ভাবিনি। ভালো কাজ করলে অ’প্রত্যাশিত ভাবে আরো ভালো কিছু পাওয়া যায় এটাই তার প্রমান। খবর, বিডিপ্রেস এজেন্সির।তিনি আরো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড’টি সিঙ্গাপুর সরকার ও জনগনের প্রতি আমাকে আরো দায়িত্বশীল করে তোলবে। করো’না ভাই’রাসের মহামা’রিতে নিজের অর্থায়নে ও নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় স্ত্রী’ নূরিয়া বেগমকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে লকডাউনে আ’ট’কে পড়া অ’ভিবাসী শ্রমিকদের মাঝে বিনামূল্যে
খাদ্য ও নিত্য পণ্যসামগ্রী বিতরণ করে আলোচনায় আসেন তিনি। এসময় রমযান মাসে বিভিন্ন শ্রমিক ডরমিটরিতে ইফতার সামগ্রী বিরতণ করেন। তার এই মহৎ উদ্যোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। এমন দু’র্যোগময় সময়ে অ’ভিবাসী শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা ও দুর্ভোগ লাগবের কথা চিন্তা করে BCS.
SG.WAY নামে অ্যাপস চালু করে। এতে করে সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন প্রান্তে শ্রমিকরা অ্যাপস ব্যবহার করে নিত্য পণ্যসামগ্রী অর্ডার করে ন্যায্যমূল্যে ফ্রি ডেলিভা’রিতে সহ’জেই ঘরে বসে তা সংগ্রহ করতে পারছেন। এতে শ্রমিকদের অর্থ সাশ্রয় ও সময় অ’পচয় অনেক কমে যায়।সিঙ্গাপুরে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করছেন। বিশেষ করে এই অ্যাপস ব্যবহার করে বাংলাদেশী অ’ভিবাসীরা খুব সহ’জে অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন, নবায়ন করতে পারছেন কোনপ্রকার ঝামেলা দুর্ভোগ ছাড়াই । বেকার, অভাব ও বিপদগ্রস্ত শ্রমিকঅ্যাপসের মাধ্যমে সাহায্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়াও আরো কিছু সুবিধাজনক সার্ভিস যু’ক্ত রয়েছে। কবির হোসেন এমন ক্রিয়েটিভিটি অ্যাপস তৈরি করে অ’ভিবাসী শ্রমিকদের জীবনযাত্রাকে সহ’জ সহায়ক করে তোলা, করো’নার দু’র্যোগ সময়ে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো ও তরুণ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সিঙ্গাপুর সরকারের নজরে আসলে প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড দেয়ার জন্য তাকে মনোনীত করা হয়। প্রতিবছরের মত সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রাখার জন্য দুইশত ব্যক্তির মধ্যে ৪৫ জনের শর্টলিস্টে তার নাম আসে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে তাকে এওয়ার্ডে কথা নিশ্চিত করা হয়। ব্রুকলিনজ স্টেইনলেস স্টিল প্রাইভেট লিমিটেড ও এসজি ওয়ে পিটি লিমিটেডের সিইও কবির হোসেন ১৯৮১ সালের ৪ঠা জানুয়ারিতে কুমিল্লা জে’লার চান্দিনার সাইকোটে জন্ম । বাবা আবদুল গফুর, মা তুরা বেগম। দুই বোন দুই ভায়ের মধ্যে সবার বড় কবির হোসেন। ছোট ভাই
কাউছার আহমেদ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সিঙ্গাপুরে থাকেন। স্ত্রী’ নূরিয়া বেগম সিঙ্গাপুরিয়ান ভা’রতীয় বংশোভূত মু’সলিম। ৫ বছরের এক ছে’লে আমির ইহসান এক মে’য়ে যোয়াকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের বেন্ডামিরে বসবাস করছেন। চান্দিনা পাইলট হাই স্কুল থেকে ১৯৯৭ সালে এসএসসি,চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ২০০০ সালে সিঙ্গাপুরে জীবিকার সন্ধানে আসেন। একটি স্টেইনলেস স্টিল কোম্পানিতে সাধরণ ওর্য়াকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে পরিশ্রম, মেধা আর সততা দিয়ে একই কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে চাকরির পাশাপাশি পড়ালেখা করে সিঙ্গাপুরের সার্টিফাইড সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। চাকরি জীবনে সীমাবদ্ধতা, অনিশ্চয়তার কথা চিন্তা করে ২০১২ সালে স্বল্প পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন। প্রাথমিক অবস্থায় একটি ফ্যাক্টরির অংশবিশেষ ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করেন। পরে সততা আর পরিশ্রম দিয়ে ধারাবাহিক সাফল্য আসায় আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাকে। বর্তমানে তার নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে সিঙ্গাপুরিয়ান,ফিলিপিনো, বাংলাদেশী মিলিয়ে ২১ জন কর্ম’রত রয়েছেন। সিঙ্গাপুরের একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে জার্মান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশে ওভা’রসিজ বিজনেস ওর্য়াকশপ করেছেন তিনি সিঙ্গাপুর সরকারের এজেন্সির মাধ্যমে। ছে’লে ইহসানের নামে ইহসান ফাউন্ডেশন করে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশে অনাথ অসহায় ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের অর্থ সহায়তা ও গৃহহীনদের ঘর তৈরি কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এছাড়া ব্রুকলিনজ কমিউনিটি সাপোর্টের প্রতিষ্ঠাতা তিনি যা সিঙ্গাপুরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে।পরিবারকে নিয়ে সময় কা’টাতে ভালোবাসেন অবসরে গল্ফ,ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করেন।কবির হোসেনের জীবনের লক্ষ্য ভালো মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা, আল্লাহর সমস্ত আদেশ মান্য করা এবং তাঁর সমস্ত নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা।
Свежие комментарии