ঘটনার শুরু ২০০০ সালে। ভরদুপুরে ভারতে উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনৌয়ের এক নারী তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হন্যে হয়ে একটা মসজিদ খুঁজছিলেন – নামাজ পড়ার জন্য। খবর বিবিসি’র। কিন্তু তেলিবাগ এলাকায়
কোনও মসজিদ খুঁজে পাচ্ছিলেন না শাইস্তা অম্বর। শেষমেশ অবশ্য পেলেন একটা মসজিদের খোঁজ। তবে মিসেস অম্বরের ছেলেকে মসজিদের ভেতরে ডেকে নিলেও ইমাম তার মাকে মসজিদের দরজা থেকে সরে যেতে বলেছিলেন। “আমার স্বামী সরকারি চাকরি করতেন। সেই সময়ে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গিয়েছিলেন। তাই আমি ভেবেছিলাম ছেলেকে নিয়ে গিয়ে নামাজ পড়িয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু যেভাবে ছেলেকে ভেতরে নিয়ে গেলেও
আমাকে মসজিদের দরজা থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল, তাতে খুব অপমানিত মনে হয়েছিল। তখনই ঠিক করেছিলাম যে নারীদের জন্য মসজিদ হওয়া দরকার,” বিবিসিকে বলছিলেন মিসেস অম্বর। যখন তিনি নারীদের জন্য আলাদা মসজিদ তৈরির চেষ্টা শুরু করলেন, তখন বাইরে থেকে তো হুমকি – ধমকি দেওয়া হতই, এমনকি স্বামী বা বাবার সঙ্গে তর্ক বেঁধে যেত মিসেস অম্বরের। তিনি বলছিলেন, “কতবার যে আমার গাড়ির চাকা ফুটো
করে দেওয়া হয়েছে! তবে একটাই ভরসা ছিল মনে মনে – যা করছি, সেটা উপরওয়ালা নিশ্চই বুঝতে পারছেন। জমি কিনে ২০০৫ সালে অম্বর মসজিদ তৈরি হয় লখনৌতে। প্রথমে শুধুই নারীরা নামাজ পড়তে আসতেন, তবে পরে পুরুষরাও এখন এখানে নামাজ পড়েন। শাইস্তা অম্বর অবশ্য শুধু নারীদের জন্য মসজিদ বানিয়েই থেমে থাকেননি। তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি সমান তালে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড-এর সঙ্গে তিন তালাক প্রথা নিয়ে বিরোধ বাধায় মিসেস অম্বর আরও কয়েকজনের সহায়তা নিয়ে মুসলিম নারীদের জন্য পৃথক ল বোর্ড তৈরি করে ফেলেছেন – অল ইন্ডিয়া মুসলিম উইমেন পার্সোনাল ল বোর্ড। মুসলমান নারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে এই সংগঠনটি। লখনৌয়ের অম্বর মসজিদে গত দশ বছর ধরে প্রতি শুক্রবার বিশেষ শিবির খোলা হয় – যেখানে রেশন কার্ড বিলি থেকে শুরু করে কন্যাশিশুদের স্কুলে পাঠানোর মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রচারণা চালানো হয়। মসজিদের নামাজ পড়তে আসা কয়েকজন পুরুষও মনে করেন যে নারীদের উন্নয়নের জন্য যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয় ওই মসজিদে, সেই পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট প্রয়োজনীয়।
Свежие комментарии